কখনো কী ভেবে দেখেছেন, আপনার কাছে যে খাবারটি খুবই পছন্দের, অন্য কোনো দেশে সেই খাবারই নিষিদ্ধ! বিশ্বে এমন অনেক দেশ আছে যেখানে মজার কিছু খাবার নিষিদ্ধ করার জন্য আইন পাস করা হয়েছে।
তবে এসব দেশে অযথাই এমন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। এর পেছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে। ব্লুগ্যাপ ওয়েবসাইটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিষিদ্ধ মজার কয়েকটি খাবারের কথা বলা হয়েছে। জেনে নিন কোন খাবার কোন দেশে নিষিদ্ধ।১. চুইঙ্গাম
চুইঙ্গামের নাম শুনে নিশ্চয়ই ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে? শুধু ছোট কেন বড় বেলায়ও কি আমাদের চুইঙ্গাম নিয়ে কম স্মৃতি আছে! চুইঙ্গাম চিবিয়ে কে সবার আগে ফু দিয়ে বড় বেলুন ফোলাতে পারে, সে প্রতিযোগিতা করেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দায়। বলতে গেলে, ছোট-বড় সবারই দারুণ পছন্দ মিষ্টি স্বাদের চুইঙ্গাম। কিন্তু শুনলে অবাক হবেন যে, সিঙ্গাপুরের মানুষ চাইলেও চুইঙ্গামের এই স্বাদ নিতে পারবে না। কারণ, এই দেশে চুইঙ্গামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর কারণ হলো, চুইঙ্গাম চিবানোর পর মানুষ রাস্তা, মার্কেট, স্টেশনগুলোতে থুথুর সঙ্গে ফেলে দেয়। আর এর আঠার কারণে একটা সময় সেই জায়গাগুলোতে দাগ হয়ে যায়। সিঙ্গাপুরের প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ তাঁর দেশকে সুন্দর ও পরিষ্কার রাখার জন্য ২০০৪ সাল থেকে চুইঙ্গামের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এর ফলে দেশটি পরিবেশগত দিক থেকে বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এ জন্যই সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউকে আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক বলা হয়ে থাকে।২. টমেটো সস
টমেটো সস যেকোনো খাবারকে এক নিমিষেই স্পাইসি করে তোলে। টমেটো সস ছাড়া বার্গার, চিকেন ফ্রাই বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাওয়ার কথা ভাবতেই পারি না। অথচ জিভে জল আনা এই খাবরটি ২০১১ সাল থেকে ফ্রান্সে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশেষ করে, ফ্রান্সের প্রাইমারি স্কুলে যেকোনো খাবারের সঙ্গে টমেটো সস খাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। শুধু সপ্তাহে একদিন টমেটো সস খাওয়া যাবে, তাও যদি স্কুলে দুপুরের খাবার হিসেবে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আনা হয়।৩. মিষ্টি জেলি চকোলেট
শুধু ছোটদেরই না বড়দেরও বেশ পছন্দ নানা রঙের মিষ্টি জেলি চকোলেট। এক নিমিষেই মুখের মধ্যে গলে যায় এই চকোলেট। স্বাদে হয়তো কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও কম বেশি সব দেশেই তৈরি হয় মিষ্টি জেলি চকোলেট। কিন্ত অবাক করার মতো বিষয় হলো, আপনি ইউকে এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ঘুরতে গেলে এই চকোলেট খুঁজেই পাবেন না। কারণ, সেখানে এই চকোলেট তৈরি এবং আমদানির ওপর ২০০৪ সাল থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে ইউকে এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কমিশনের পক্ষ থেকে এই চকোলেট নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ৪. স্পাইসি সমুচা
বিকেলের নাস্তায় চায়ের সঙ্গে সমুচার মজাই আলাদা। আর বৃষ্টির মৌসুম হলে তো কথাই নেই। অথচ স্পাইসি সমুচার স্বাদ চেখে দেখার সুযোগ নেই সোমালিয়ার মানুষদের। কারণ সেই দেশে ২০১১ সাল থেকে এই খাবরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আল শাবাব নামের দ্বিনী যোদ্ধারা। তাদের ধারণা, সমুসার তিন কোণা খ্রিস্টানদের হোলি ট্রিনিটির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।৫. প্রক্রিয়াজাত ছাড়া দুধ এবং দুধ জাতীয় খাবার
পুষ্টির কথা চিন্তা করলে প্রথমেই দুধের কথা মনে পড়ে। আর হবেই বা না কেন? শরীরে সঠিক মাত্রায় পুষ্টি দুধের মাধ্যমেই অসে। অথচ এই দুধ এবং দুধ জাতীয় খাবার আমেরিকার ২২টি স্টেট এবং কানাডায় ২০০৯ সাল থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ কাঁচা দুধে এক ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকে যা শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন রোগজীবাণু ছড়াতে পারে। এ কারণে প্রক্রিয়জাতকরণ ছাড়া কোনো প্রকার দুধ এবং দুধ জাতীয় খাবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।৬. হ্যাগিস ( ভেড়ার কলিজা, ফুসফুস ও যকৃত দিয়ে প্রস্তুত খাদ্যবিশেষ)
অনেক দেশেই হ্যাগিস বেশ পছন্দের একটি খাবার। এটি এক ধরনের পুডিং। যা ভেড়ার কলিজা, ফুসফুস ও যকৃত দিয়ে তৈরি করা হয়। এর সঙ্গে পেঁয়াজ, চর্বি, ওটমিল এবং লবণ মেশানো হয়ে থাকে। স্কটল্যান্ডে হ্যাগিসকে জাতীয় খাবার বলা হয়। অথচ এই খাবার যুক্তরাষ্ট্রে একেবারেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর কারণ এই খাবার তৈরির উপকরণগুলো। এটি তৈরি করতে ভেড়ার শরীরের যে অংশগুলো নেওয়া হয় তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এ কারণেই হ্যাগিসের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ৭. ডিমসদৃশ চকোলেট (কিনডার এগস)
ডিম্বাকৃতির খোলসের ভেতরে মজাদার এই চকোলেট হয় তো অনেকেই খেয়েছেন। এর মধ্যে লুকানো থাকে বিভিন্ন খেলনা। যা শিশুদের ভীষণ পছন্দ। কিন্তু শিশুদের মজার এই খারবার যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ তাদের ধারণা এর মধ্যে খেলনা থাকার কারণে চকোলেটটি শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। খেলনার কারণে খাবারে ক্ষতিকারক সীসা থাকতে পারে, এমন ঝুকির কারণেই সুস্বাদু এই চকোলেটটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment